বুদ্ধিবৃত্তিক কর্তৃত্ব ও বুদ্ধিজীবীর ধারণা


বুদ্ধিবৃত্তি শব্দটা শুনলেই আমাদের কাছে কেমন যেন ভারী ভারী লাগে,তাই না? যার কারণে বুদ্ধিজীবী শব্দটাও অনেকটাই ভারী শব্দে পরিণত হয়েছে।তো এই বুদ্ধিবৃত্তি নিয়েই আজকের এই আলোচনা। খুবই সাধারণ ও প্রাথমিক কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করব। তবে নিতান্তই অগুরুত্বপূর্ণ আলোচনার কাতারে তা ফেলা যাবে না। মূল আলোচনা শুরু করার আগে পাঠককে একটা প্রশ্ন করে যাই। সেটা হলো,আপনি তো চিন্তাক্ষম ব্যক্তি। এই যে চিন্তা আপনি করেন তা কতটুকু আপনার? বা আরেকটু গুছিয়ে বললে আপনার চিন্তা কতটুকু স্বতন্ত্র?
এই প্রশ্ন রেখেই আমরা আমাদের মূল আলোচনায়  প্রবেশ করি। আমাদের আজকের এই আলোচনাটাকে আমরা নাম দিব “বুদ্ধিবৃত্তিক কর্তৃত্ব”“কর্তৃত্ব” শব্দটাকে আরো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য আমি আরো একটি ইংরেজি শব্দের অবতারণা করব এখানে।সেটা হলো hegemony”. আমরা এই hegemony শব্দটার বাংলাকে কর্তৃত্ব ধরেই আগাব।পাঠক এই hegemony কি? এর উৎপত্তি কোথায় ।এসব নিয়ে কিছু আলোচনাও আসবে। hegemony কি এই প্রশ্নে যাওয়ার আগে এর উৎপত্তি নিয়ে দু চারটা কথা বলি। কার্ল মার্ক্স নামের এক ভদ্রলোক এই টার্মটা নিয়ে সর্বপ্রথম হালকা পাতলা আলোচনা করেন কিংবা বলা যায় hegemony তত্ত্ব নিয়ে একটা ধারণা দেন। ইতালিয়ান সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক,গ্রামশি  এই তত্ত্বকে দাঁড় করান।এই  গ্রামশি ভদ্রলোককে তার জীবনের ২০ বছর কাটাতে হয় কারাগারে। তার মৃত্যুর পরে prisons notebook নামে  তার ডায়েরীর বিভিন্ন অংশ নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হয়। এই বইতে তিনি এই তত্ত্বের বিষয়ে যুক্তি প্রদান করেন। গ্রামশি বলতেন মানুষ শুধুমাত্র শক্তি দ্বারা শাসিত হয় না,বরং বুদ্ধিবৃত্তি দ্বারাও শাসিত হয়। আবার মার্ক্স ও মনে করতেন ,প্রত্যেকটা যুগে শাসনের যে ধারণাগুলো সেগুলো সবসময়ই শাসক গোষ্ঠী থেকেই এসেছে। আমরা আমাদের আজকের এই আলোচনায় গ্রামশিকে অনেকবার স্মরণ করব। প্রথমেই গ্রামশির মতে কিছু টার্ম এর ব্যাখ্যা দেয়া উচিত।তাহলে আলোচনাটি ধরতে সুবিধা হবে পাঠকের।


  প্রথমত নাগরিক সমাজ বলতে  গ্রামশি কি বুঝিয়েছেন তা আমাদের বুঝা উচিৎ। গ্রামশির মতে নাগরিক সমাজ হলো, “common area in which different social classes and groups operated in order to reach or redefine common consent” (Prakash 52). অর্থাৎ নাগরিক সমাজ এমন একটি সাধারণ স্থান যেখানে একটি সাধারণ সম্মতিতে পৌছানোর জন্য কিছু সামাজিক শ্রেণী কাজ করে। এরপরে গ্রামশি হেজেমনিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ,হেজেমনি আমাদের নিত্যদিনকার অভ্যাসগুলো এবং প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বারা সমাজের  বিভিন্ন শ্রেণীর প্রভাব তৈরি এবং সেই প্রভাব বজায় রাখার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এরপরে আমরা বুদ্ধিজীবী বলতে কি বুঝব তা নিয়ে একটু আলোকপাত করি। গ্রামশির মতে বুদ্ধিজীবী হলো এমন ব্যক্তি যারা নিজেদের নির্দিষ্ট শ্রেণীর কর্তৃত্ব তৈরী ,তা বজায় রাখা এবং এই কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য দায়ী। গ্রামশি বলেন এই বুদ্ধিজীবী আবার দুইপ্রকার। এরা হলেন জৈব বুদ্ধিজীবী এবং চিরাচরিত বুদ্ধিজীবী। জৈব বুদ্ধিজীবী হলেন তাঁরা যারা সমাজে হঠাৎ  নতুন কোনো শাসনের শুরু হলে নেতৃত্বের জন্য বা এর ধারণা আদর্শ তৈরীতে এগিয়ে আসেন। এই জৈব বুদ্ধিজীবীর একটি বৈশিষ্ট্য হলো এরা একই সাথে যেমন   বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা করেন তেমনি আবার শ্রমের এবং উৎপাদনের  দিকেও তাঁদের অবদান থাকে। আবার যখন চিরাচরিত বুদ্ধিজীবীদের দিকে যখন যাব আমরা তখন আমরা দ্বিতীয় বিষয়টি অনুপস্থিত পাবো।এই দ্বিতীয় শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরা শাসক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করেন।যার কারণে এই শ্রেণী পূর্ব আলোচিত হেজেমনি বা কর্তৃত্ব বিস্তারের জায়গায় যখন পৌছেন তখন তাঁরা আসলে তার সেই নিজস্ব শ্রেণী অর্থাৎ শাসক শ্রেণীর কর্তৃত্ব স্থাপনের দিকেই বেশি মনোযোগী হোন। সমাজের কর্মক্ষম শ্রেণী দ্বারা  যত বেশি সংখ্যক জৈব বুদ্ধিজীবীর উৎপত্তি হতে থাকবে ততই আদর্শিক জায়গাটি প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করবে। চিরাচরিত বুদ্ধিজীবীরা সমাজে আগ থেকেই বিদ্যমান। আর জৈব বুদ্ধিজীবীর উদ্ভব হয় নতুন কোনো শাসক শ্রেণীর উদ্ভবের মাধ্যম। গ্রামশি চিরাচরিত বুদ্ধিজীবীদের স্বাধীন হিসবে ব্যাখ্যা করেন। আবার ধরা যাক একজন গার্মেন্টস কর্মী ও কিন্তু একজন চিন্তক,বুদ্ধিজীবী।সে বুদ্ধিজীবী এই অর্থে যে তাকে তার কাজের পারফেকশনের জন্য নিত্যনতুন চিন্তাভাবনা করতে হয়। অর্থাৎ সে একজন জৈব বুদ্ধিজীবী।  গ্রামশির একটি চিন্তাকে তুলে ধরা উচিৎ এই জায়গায়,

 “all men are intellectuals…but not all men have in society the function of the intellectuals.”



তো আমরা মোটামুটি কর্তৃত্ব বিষয়টি সম্পর্কে কিছুটা প্রাথমিক ধারণা পেয়েছি। আমরা চিরাচরিত বুদ্ধিজীবী আর জৈব বুদ্ধিজীবী সম্পর্কেও বুঝলাম। সমাজের প্রভাবশালী গোষ্ঠী আসলে তার প্রভাব বজায় রাখতে দুইটি পদ্ধতি ব্যবহার করে। প্রথমটি হলো বলপ্রয়োগ যেটি অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কাঠামো দ্বারা ফলবান করে তোলা হয়। আর দ্বিতীয় যে পদ্ধতি সেটি হলো সম্মতি। নিঃসন্দেহে  প্রথমটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু গ্রামশি বারবার দ্বিতীয়টির উপর জোর প্রদান করেন। ধারণা বা আইডিয়া আরো বেশি শক্তিশালী কেননা এগুলো সাধারণের উপর কর্তৃত্ব করার ক্ষেত্রে নিজস্ব সম্মতি তৈরী করে। এই যে বিষয়টি ঘটে এটি সম্পূর্ণ আমাদের অজান্তেই ঘটে। এর ফলাফল আমাদের চোখের সামনেই থাকে কিন্তু এর উৎস আমরা কখনোই খুঁজে পাই না। এই যে ইচ্ছ বা অনিচ্ছামূলক যে পীড়ন আমরা গ্রহণ করি সেটাকেই গ্রামশি ইনটেলেকচুয়াল হেজেমনি কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক কর্তৃত্ব নাম দিয়েছেন। এই জিনিসটির পিছনে যে বিষয়টি কাজ করে তাহলো প্রভাবশালী শ্রেণীর নিজ স্বার্থের জন্য কোনো আদর্শ বা বিশ্বমত তৈরী করা এবং তা প্রচার করা। এই আদর্শ বা বিশ্বমত প্রভাবশালী ব্যক্তিরই স্বার্থকে সমর্থন করে। এই আদর্শ বা বিশ্বমতটি প্রচার পায় শিক্ষা কিংবা গণমাধ্যমগুলো দ্বারা। এ নিয়ে নওম চমস্কি এবং এডওয়ার্ড  হারম্যানের চমৎকার একটি বই হলো ,”সম্মতি উৎপাদন” বা ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট। চমস্কি ও হারম্যান এই বইতে দেখানোর চেষ্টা করেছেন কিভাবে গণমাধ্যমের সংবাদ্গুলো ছাঁকন প্রণালীর মাধ্যমে আমাদের কাছে আসে। সাধারণ জনতার মাঝে কোনো বার্তা প্রদান ও বিভিন্ন ধরণের প্রতীক সম্পরসারণের একটা ব্যবস্থা হিসেবে গণমাধ্যম কাজ করে থাকে। এই বার্তা বা প্রতীক কিভাবে প্রচারিত হবে সেগুলো প্রচারণা মডেল বা প্রোপাগান্ডা মডেলের ভিতরে ফেলেছেল চমস্কি-হারম্যান।  এছাড়াও নগুগি ওয়া থিয়াঙ্গো ও এডওয়ার্ড সাইদের আলোচনা পড়ে দেখা যেতে পারে এ বিষয়ে। 


গ্রামশি যখন এই ইন্টেলেকচুয়াল হেজেমনি নিয়ে চিন্তা করছিলেন বা এই তত্ত্ব দাঁড় করাচ্ছিলেন  তখন হয়ত তার মধ্যে এই প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা কাজ করে। সাধারণ জনগণের আনুগত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে শাসক শ্রেণীর সবসময়ই  এই প্রচারণাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হয়েছে। বর্তমানে অবশ্য এই প্রচারণা বা প্রোপাগান্ডাকে নেতিবাচক প্রভাবরূপে দেখা হয়। মুক্তবাজার অর্থনীতির এই পৃথিবীতে তথ্যের প্রাচুর্যের কারণে এই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাকে নিন্দিত করা হয়। তাছাড়া ইন্টারনেটে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য অতি সহজে প্রাপ্তির জন্য মানুষকে আর একমুখী চিন্তার দিকে ধাবিত করা সম্ভব হয় না অনেকক্ষেত্রেই। এমনকি সে চেষ্টাটাও অনেক সময় করা যায় না। বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রচারণা আর সরাসরি ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয় না। পশ্চিমা দেশগুলো এখন নিজেদের মধ্যে উদার মুক্তবাজার অর্থনীতির বিশ্বাস করে। এটার কারণ হলো বিশ্ব বাণিজ্যের এই বার্তাগুলো আমাদের কাছে খুব আকর্ষণীয়ভাবে পেশ করা হয়। তাই আমরা এর সাথে একমত না হয়ে উপায় থাকে না! অথচ চিন্তাভাবনা করলে এর ও বিভিন্ন ধরণের সমস্যা অতি অবশ্যই উঠে আসবে। কিন্তু আমরা আর সেদিকটায় আলোকপাত করি না। গ্রামশির সংজ্ঞা অনুযায়ী এখানে একটি “বিশিষ্ট শ্রেণী” কাজ করে যারা আসলে আদর্শগুলো তৈরী করে এবং সেই আদর্শ বিরাট জনগোষ্ঠীর কাছে ছড়িয়ে দেয় এবং তা গ্রহণযোগ্য করে তোলে তাঁদের কাছে। এই প্রক্রিয়াটা এমন যে যখন কোনো বিষয়কে আপনার সামনে গ্রহণযোগ্য আকারে তুলে ধরা হবে তখন আপনি বাধ্য হবেন ভাবতে  “এটাই সঠিক অভিগমন হয়তো”
  আমরা বেশ কিছু প্রাথমিক ধারণা পেলাম।এখান থেকে কিছুটা বিশ্লেষণের দিকে যদি আমরা যাই তাহলে দেখব যে,আসলে স্বতন্ত্র বুদ্ধিজীবী শ্রেণী  বলতে আমরা আসলে কিছুই পাই না। বরং প্রত্যেকটা সমাজই তার নিজস্ব বুদ্ধিজীবী শ্রেণী তৈরী করে। আর ঐতিহাসিকভাবেই এই বুদ্ধিজীবীরা হলেন প্রগতিশীল  শ্রেণী। আর অন্যান্য সমাজের বুদ্ধিজীবীদের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টাগুলো থেকেই বর্ণ বা জাত প্রকৃতিগুলো উঠে আসে।এক্ষেত্রে গ্রামশির The formation of the intellectuals রচনার শুরুর দিকে তার রেখে যাওয়া একটি প্রশ্নের উদ্ধৃতি দিতে পারি, “Are intellectuals an autonomous and independent social group, or does every social group have its own particular specialized category of intellectuals?”   এখানে মজার একটা বিষয় নিয়ে একটু কথা বলতে চাই। আমরা কথায় কথায় “কমন সেন্স” নামের শব্দদ্বয়  ব্যবহার করে থাকি। একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে যদি দেখি আমরা তাহলে দেখব যে একটা এলিট বা অভিজাত শ্রেণী শ্রেণীই আসলে আমাদের মধ্যে এই কমন সেন্সের বিষয়টি তৈরী করে দিচ্ছে। হ্যাঁ তাঁরা বুদ্ধিজীবী। তাঁরা আমাদের একটি স্ট্যান্ডার্ড দেখিয়ে যাচ্ছেন । যে স্ট্যান্ডার্ডের বিবেচনায় আমরা কোনো জিনিসকে ভালো কিংবা খারাপ বলি। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। যেমন ধরেন আমাদের মধ্যে একটা ধারণা ছোটোবেলা থেকেই তৈরী করা হয় যে পৃথিবী কমলালেবুর মতো গোল। মানে যখন আমরা বিজ্ঞান নিয়ে ঘাটাঘাটিও করা শুরু করিনি তার আগেই আমাদের মধ্যে একটা ধারণা প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। তো এর ফলাফল কি হতে পারে? যে মানুষটা কিছু পড়ে নাই জানে নাই,সে যখন এসে বলে,”পৃথিবী কি আসলেই গোল?” তখন আমরা নাক সিটকে বলি “এটা তো কমন সেন্সের ব্যাপার ।সবাই জানে।“ সবাই জানে বুঝলাম,কিন্তু সবাই কি বিশ্লেষণ করে? এভাবেই ছোটো ছোটো বিষয়গুলো নিয়ে অভিজাত শ্রেণী আমাদের একটা “ধারণা” প্রদান করে ফেলে আর এই ধারণাকেই আমরা বেদবাক্য ধরে নিই। গ্রামশি যখন কাউন্টার হেজেমনির কথা বলেন তখন সেখানে আসলেই বিরাট একটা প্রশ্ন এভাবে দাঁড়িয়ে যায় যে যখন সাধারণ মানুষই অভিজাত শ্রেণীর কর্তৃত্বকে “কমন সেন্স” হিসেবে গ্রহণ করে ফেলে সে জায়গায় কি আর প্রতি-কর্তৃত্ব স্থাপন করা সম্ভব? আমরা সমাজে স্থাপিত এই কর্তৃত্বগুলোকে বেদবাক্য হিসেবে নিয়ে,এর বাইরে আর কোনো কথা থাকতে পারে না এই মনোভাব স্থাপন করে ফেলি বলেই চেতন বা অবচেতনভাবে আমরা  বা আমাদের মন ঐ অভিজাত শ্রেণীর উপনিবেশ হয়ে যায়। ঐ আদর্শিক কর্তৃত্বের কারণেই আমাদের চিন্তাচেতনা এমন হয়ে যায় যে আমরা ঐ অভিজাত শ্রেণীকে সার্ভ করার উদ্দেশ্যেই আসলে চিন্তা করি। আমরা এটাও বুঝতে অপারগ হই যে আমাদের আসলে চিন্তা করিয়ে নেয়া হচ্ছে। আমাদের চিন্তা দ্বারা উপকৃত হচ্ছে অভিজাত বা শাসক শ্রেণীটাই। এই যে চিন্তা করিয়ে বিষয়টা। এতে কিন্তু শাসক শ্রেণীর সার্থকতা কাজ করে। কোনো বল প্রয়োগ না করেই সে শুধু আপনার  মনের ভিতরের চিন্তাটাকে নিয়ন্ত্রণ করে তার কর্তৃত্বকে আপনার মাঝে স্থাপন করছে। আর এটা এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত যে আপনি বুঝতেই পারেন না কি হচ্ছে না হচ্ছে!
বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রে প্রোপাগাণডা মডেল কিভাবে কাজ করে ,সেটা নিয়ে হালকা আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন ধরুন ,আমরা বুদ্ধিজীবী বলতে কাদের বুঝি? প্রতিটা মুহুর্তে আমরা যাদের টেলিভিশনের সামনে বিভিন্ন টক শো তে অংশগ্রহণ করতে দেখছি, নানা ঘটনায় পত্রিকায় কলাম লিখতে দেখছি তাদেরই আসলে আমরা বুদ্ধিজীবী হিসেবে ধরে নিই। অর্থাৎ, এসব বুদ্ধিজীবী স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎপন্ন বুদ্ধিজীবী না,বরং আমাদের চোখের সামনে বারবার কিছু মানুষকে এনে তাদের বুদ্ধিজীবী বানানো হচ্ছে , এবং এভাবেই প্রচারণা বা প্রোপাগাণ্ডার মাধ্যমে তারা আমাদের সমাজে বুদ্ধিজীবী তকমা পাচ্ছে। অতএব ,তারা নিজেরা কতটুকু স্বতন্ত্র চিন্তা করছে, বা কতটুকু জনগণের স্বার্থের কথা বলবে সে প্রশ্নটা রয়ে যায়। সেটি না করে বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর হয়ে কথা বলাটাও অস্বাভাবিক না। ভেবে দেখুন ,কি ভয়ংকর ব্যাপার!
মানুষের ভিতরকার অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ একটি ফাংশন হলো চিন্তাভাবনা। এই চিন্তাভাবনার কারণেই সে আর দশটা প্রাণী থেকে ভিন্ন। কিন্তু যখন আমরা কাঠামো নিয়ে আলোচনা করি,কিংবা যখন আমরা কর্তৃত্ব নিয়ে আলোচনা করি এই চিন্তাভাবনাও আসলে শেষ পর্যন্ত আমাদের কতটা স্বতন্ত্র থাকে সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন রয়ে যায়। গ্রামশি সমাজে প্রতি-কর্তৃত্ব আনার ক্ষেত্রে  চিরাচরিত বুদ্ধিজীবীদের কথা এনেছেন। কারণ তারাই একটা বিরাট অংশ জুড়ে আছে।  পাশাপাশি আরো দুটি জিনিসকে তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রথমটি হলো সাধারণ জনগণের এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা। কারণ জনগণ সাধারণৎ ভুল সিদ্ধান্ত তৈরী করে না।  আর দ্বিতীয়টি হলো জৈব বুদ্ধিজীবী উৎপাদন। কারণ এই জৈব বুদ্ধিজীবীরা উৎপাদন ব্যবস্থার সাথেও সংশ্লিষ্ট থাকে। ইন্টেলেকচুয়াল হেজেমনি খারাপ কি ভালো সেদিকটায় আমি যাচ্ছি না। তবে এটা কতটা প্রভাবশালী সেটা দেখানোর চেষ্টা আমি আমার এ রচনায় করেছি। 


তথ্যসূত্রঃ

১)  Selections from prison notebook- Antonio Gramsci
২) সম্মতি উৎপাদন(manufacturing consent)- চমস্কি ও হারম্যান

Comments