কর্ণেল তাহেরের রাজনৈতিক ভাবনা
(১)
কর্ণেল তাহেরকে আমরা ফাঁসির মঞ্চের নায়ক হিসেবে চিনলেও কেবল ফাঁসির
মঞ্চের নায়ক হিসেবে তাঁকে আটকে রাখলে তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রতি সঠিক বিচার হবে
না। কারণ কর্ণেল তাহেরের রাজনীতির সাথে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে
জড়িত। কর্ণেল তাহের সেনাবাহিনীতে প্রবেশ করেছিলেন যে উদ্দেশ্যে সে উদ্দেশ্যটাও বিশ্লেষণ
করা অত্যন্ত জরুরি। কর্ণেল তাহের বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে একটা ট্র্যাজেডি একদিকে
অন্যদিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে তাঁর ফাঁসিটা একটা কলঙ্কময় ঘটনা। তাহেরকে
নিয়ে তাই একটা সূক্ষ্ম আলোচনা করাটা অত্যন্ত জরুরী। এখানে বুঝতে হবে যে, কর্ণেল
তাহের আসলে কোনো একক ব্যক্তি নন। তিনি একটা আদর্শের , একটা পন্থার ধারক। তাহেরকে তাই
বুঝতে হবে তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে। প্রিফিগারেটিভ পলিটিক্স নামে রাজনীতিতে একটা টার্ম
আছে, যেটা হচ্ছে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের চেয়ে পন্থাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। কর্ণেল তাহেরকে
নিয়ে আলোচনায় এই প্রিফিগারেটিভ পলিটিক্সটা আমাদের ভালোমতন বোঝাটা খুব দরকার। তাহের
কেন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছেন, কেন তাহেরের গুরুত্বটা কেবল সাহসিকতায় আটকে থাকছে না সেটার
আলোচনা করতে হবে।
কর্ণেল তাহের তাঁর বিপ্লবী রাজনীতির অংশ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন
জাসদকে। তিনি ভেবেছিলেন, জাসদের হাত ধরেই হয়তো বাংলাদেশে একটা বিপ্লবী পরিবরর্তন আসবে।
এই ভাবনাটায় আমাদের বামপন্থীদের বিশ্লেষণের একটা ব্যাপার ছিল। যে সময়টায় পুরো দুনিয়ার
বামপন্থী রাজনীতি তার ক্যাবলা ঠিক করছে ঠিক সে সময়েই কর্ণেল তাহের বাংলাদেশে নিজস্ব
ধারার রাজনীতির প্রয়োজনটা অনুধাবন করেন। জাসদ সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছি কি পারে
নি সেটা অন্য একটা বিশাল আলাপ। কিন্তু কর্ণেল তাহেরের এই যে নিজস্ব রাজনীতি তৈয়ার করার
যে ভাবনাটা সে ভাবনাটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বটে। ঐতিহাসিকভাবেই। ঐতিহাসিকভাবে
যদি বাংলাদেশের তথা এই গোটা ভারতবর্ষের রাজনীতির দিকে আমরা তাকাই তাহলে দেখা যাবে আসলে
ভারতবর্ষে নিজস্ব ধারার যে রাজনীতি সেটা গড়ে ওঠতে অনেক সময় লেগেছে। কংগ্রেসের দিকে
তাকানো যাক, যেখানে সমগ্র ভারতবর্ষের পার্টিগত মেইনস্ট্রীম রাজনীতির শুরু হচ্ছে। কংগ্রেসের
রাজনীতিটা শুরু হয় ব্রিটিশদের হাত ধরেই। অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম মোদ্দাকথায় আসলে লর্ড
মেকলের শিক্ষানীতির একটা প্রয়োগ দেখিয়েছেন কংগ্রেস গঠনকালে। কংগ্রেসের রাজনীতিকরা কিন্তু
প্রত্যেকেই বিলিতি শিক্ষায় শিক্ষিত। এরপর আসল মুসলিম লীগ। একদিক থেকে বলা যায়, মুসলিম
লীগ আসলে কংগ্রেসেরই ঔরস থেকে জন্মানো পার্টি। তাঁর থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগ, আওয়ামী
লীগ। এবং পরবর্তীতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি এসব। এসব জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর শুরুটা
সেই কংগ্রেসেই এবং তাদের কাঠামো আজতক ব্রিটিশদের তৈরি করে দেয়া কাঠামো। আবার যদি বামপন্থী
রাজনীতির দিকে তাকানো হয় তাহলে দেখা যাবে প্রত্যেকেই আগে কেবলা ঠিক করে, আর সে অনুযায়ী
পার্টিগুলো চলে। হয় মস্কো নাহয় পিকিং। এই জায়গায় দাঁড়িয়েই হয়তো কর্ণেল তাহের নিজস্ব
রাজনীতির স্বপ্ন দেখেছেন। জাসদের শুরুটা ছাত্রলীগের বিভক্তির মধ্য দিয়ে। ছাত্রলীগের
র্যাডিক্যাল গ্রুপ সমাজতন্ত্র কায়েমের উদ্দেশ্যে এই পার্টি গড়ে তোলে। সে সময়কার শক্তিশালী
বিরোধী দল হিসেবে কর্ণেল তাহেরও আস্থা রেখেছিলেন এই পার্টির উপর। তাই কর্ণেল তাহেরকে,
তাঁর বিপ্লবকে নিয়ে যখন আমরা আলোচনা-সমালোচনা করব তখন আমাদের জাসদের রাজনীতি, তার সিদ্ধান্তগুলো
নিয়ে মূল্যায়ন, আলোচনা-সমালোচনা শুরু করতে হবে।
ছবিঃ উইকিপিডিয়া |
(২)
কর্ণেল তাহেরের রাজনৈতিক গুরুত্বকে বুঝতে হবে তাঁর রাজনৈতিক স্বজ্ঞা
দিয়ে। রাজনীতি মানেই কেবল যে পার্টি তা কিন্তু নয়। কর্ণেল তাহেরের রাজনীতির দূরদর্শিতা
বোঝা যায় তাঁর স্বপ্নগুলো থেকে। আবার তাঁর সীমাবদ্ধতা বোঝা যায় তাঁর কর্ম থেকে। কর্ণেল
তাহের জাসদকে একটা সংস্কারের রাজনীতির পথ হয়তো দেখাতে চেয়েছিলেন। সেই সংস্কারের বোঝাপড়াটা
তাঁর মধ্য প্রচুর পরিমাণে ছিল। দুটো জায়গায় তাহেরের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোর বিশ্লেষণ
আমরা করতে পারি।
প্রথমটা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তাঁর ভাবনা। আমাদের মেইনস্ট্রীম
রাজনীতিতে যেরকম পার্টিবাজির ইতিহাসচর্চা হয় কর্ণেল তাহের মুক্তিযুদ্ধকে সেভাবে দেখেন
নি। তিনি মুক্তিযুদ্ধকে একটা গণবিপ্লব রূপে দেখেছেন। এটা জাতীয়তাবাদী কোনো উত্থান না।
জাতীয়তাবাদ এখানের একটা অংশ বটে কিন্তু এটা জাতীয় মুক্তির আন্দোলন। মুক্তিযুদ্ধের অর্থনৈতিক
ডাইমেনশন বোঝা ব্যতীত মুক্তিযুদ্ধের সমগ্র পাঠ কখনো সম্ভব না। আরো একটা বিষয় এখানে
যোগ করা উচিত। তাহের মনে করতেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা বড় তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেছে। এই
তাড়াহুড়োর ব্যাপারটিকে খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহেরের রাষ্ট্র সংস্কারের রাজনৈতিক
প্রজ্ঞাটা এখানেই প্রকাশ পাচ্ছে। তাহের বুঝতে পেরেছিলেন আসলে বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্মকালীন
সময়ে পরিপূর্ন আদল পাওয়ার যথেষ্ট সময় পায়নি। এজন্য ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ গণবিপ্লব
হয়ে শুরু হলেও গণমানুষের রাষ্ট্র গড়ে তোলার যে ব্যাপারটা তা করে ওঠতে পারে নি। অর্থাৎ
পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভূখন্ড স্বাধীন করতে পারলেও
স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারি নাই। সেই সময়টা আমরা পাই নাই। এজন্যই তাহেরের
মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বোঝাপড়াটা এরকম। আসলে ঠিক পাকিস্তান রাষ্ট্রও নয়, আমরা ব্রিটিশ
রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকেই স্বাধীন হতে পারি নি। আমাদের নেতৃত্বের মাথাগুলো পরিবর্তিত হলেও
কিন্তু সিস্টেম একই রয়ে গেছে। তাহের চ্যালেঞ্জ করেছে এই সিস্টেমকেই। একবার নয়, বারবার।
তাহের সেনাবাহিনীর মানুষ ছিলেন। সেনাবাহিনী সংক্রান্ত তাঁর যে বোঝাপড়া
নিশ্চিতভাবেই অন্য যে কারো থেকেই আলাদা। বিপ্লবী রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন বলেই তাঁর
মধ্যে একটা ভাবনা ছিল যে সেনাবাহিনীকে হতে হবে গণমানুষের বাহিনী। সেনাবাহিনীর ঔপনিবেশিক
কাঠামোকে ঝেড়ে সম্পূর্ণ নিজের মতো করে গণমানুষের বাহিনী তৈরী করার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের।
মুক্তিযুদ্ধ সে সুযোগটা করে দিয়েছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম মুক্তিযুদ্ধের মতো
একটা গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে। তাহের তাই এই সেনাবাহিনীকে নতুন করে নতুন রূপে সাধারণ মানুষের
বাহিনীতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। এই পরিণত করতে চাওয়ার জন্য তিনি সৈনিকদের, ব্যাটম্যানদের
অধিকারের জন্য কথা বলেছেন। এমনকি অফিসারদের নিয়োজিত করেছেন ধান কাটার মতো কাজে। তাহেরের
এই বোঝাপড়ার জায়গাটা অত্যন্ত সঠিক ছিল। গণমানুষের বাহিনী না হয়ে ওঠার কারণেই বাংলাদেশের
ইতিহাসের কলঙ্কময় ঘটনাগুলোতে সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে। ১৫ই আগস্ট থেকে তার শুরু।
সেই ধারাবাহিকতা আজো অব্যাহত। তাহেরের এই দুই স্বপ্ন আসলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে কল্যাণমুখী
রাষ্ট্র করে তোলার স্বপ্নকেই নির্দেশ করে। তাহেরের রাজনৈতিক স্বপ্ন আর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের
মুক্তিকামী স্বপ্ন এক সুতায় গাঁথা পড়ে এখানেই।
(৩)
তাহেরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটা ছিল উৎপাদনমুখী সেনাবাহিনী
গড়ে তোলার রূপরেখা প্রদান করা। উপমহাদেশের ইতিহাসেই এরকম ঘটনা বিরল। তাহেরের উৎপাদনমুখী
সেনাবাহিনী গড়ে তোলার পরিকল্পনা সফল হলে সেনাবাহিনী কেবলমাত্র নিয়ন্ত্রণকারী একটা বাহিনীতে
থাকত না, বরং সেনাবাহিনী হয়ে ওঠতো আরো গণবান্ধব। তাহেরের এই পরিকল্পনা যখন তৎকালীন
শাসক বঙ্গবন্ধু বাস্তবায়ন করেন নি একরকম অভিমান থেকেই তাহের সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ
করেন। এই ঘটনাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অবশ্যই একটি বড় ঘটনা। সেনাবাহিনী থেকে বের হওয়ার
পরই তাহের তাঁর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে পুনঃপরিকল্পনা করেন।
এখানে তাহেরের কর্মপন্থা কিভাবে তাঁর সীমাবদ্ধতায় পরিণত হয় সে আলাপটা
তোলা যেতে পারে। শুরুরদিকে যেটা বলছিলাম প্রিফিগারেটিভ পলিটিক্সের কথা, সেটা এখানেই
কার্যকর হয়। তাহের ১৯৭৪ পর্যন্ত পন্থাটাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে মানবিক
করে তোলার লক্ষ্যে তিনি যে রূপরেখা প্রদান করছেন সেটা আসলে তাহেরের পন্থাকেই প্রকাশ
করছেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরকে যদি আমরা দেখি , তাহলে দেখা যায় তাহের বরং উদ্দেশ্যটাকে
বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলছেন। তাহের সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে
চেয়েছেন , কিন্তু সে উদ্দেশ্য পূরণ করতে গিয়ে তিনি ভরসা করে বসেন জিয়াউর রহমানের উপর,
যিনি সর্বদা সুযোগ সন্ধানী এক ব্যক্তি ছিলেন। তাহের সেটা জানার পরও যখন জিয়ার উপর ভর
করে তিনি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছিলেন সেটা অবশ্যই তাঁর রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা এবং ভুলগুলোর
অন্যতম। এবং এই ভুলের মাশুল তাহেরকে জীবন দিয়ে দিতে হয়েছে। এখানে উল্লেখ করতে হয় তাহেরের
এ বিপ্লব যখন ব্যর্থ হয় তখন আসলে পুরো বাংলাদেশ রাষ্ট্রর ক্ষেত্রে হেচকা টানে উল্টোস্রোতে
যাওয়ার পথটি সুগম হয়ে যায়। তাহেরের এ ব্যর্থতা হয়ে ওঠে বাংলাদেশের সংস্কারের স্বপ্ন,যেটা
খোদ তাহেরও করেছিল তার উল্টোটান।
(৪)
তাহেরের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কজনক অধ্যায়টি জড়িয়ে
আছে। প্রহসনের বিচারে কর্ণেল তাহেরের ফাঁসি কেবল যে বাংলাদেশের কোর্ট মার্শালের অন্ধকার
অধ্যায় তা-ই নয়, এটা ছিল বিশ্বের জন্য একটা কালো অধ্যায়। ইতিহাসের প্রথম পঙ্গু ব্যক্তি
হিসেবে ফাঁসির কাঠে চড়েন কর্ণেল তাহের। কর্ণেল তাহেরের এ বিচার কেন প্রহসনের তার পক্ষে
অনেক যুক্তিই আসলে দেয়া যায়। যেমন ধরা যাক
এই বিচারে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ ছিল না। সে মামলার কোনো আসামীই আত্মপক্ষ সমর্থনের
সুযোগ পায় নি।
তারপর যদি দেখা যায় , ঐ মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা আসলে কি
ভিত্তিতে করা হয়েছে তা উল্লেখ করা হয় নি। যদিওবা রাষ্ট্রদ্রোহের তকমা দেয়া হয়, কিন্তু
কার্যত সে সময়ে কোনোভাবেই রাষ্ট্রদ্রোহ হওয়াটা সম্ভব ছিল না। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে
তাহেরকে যে আইনে ফাঁসি দেয়া হয় , সেই আইনে এর আগ পর্যন্ত কোন পঙ্গু ব্যক্তির ফাঁসির
বিধান ছিল না। তাহেরের ফাঁসির ১০ দিন পর, ১৯৭৬ সালের ৩১ শে জুলাই এই আইন কার্যকর করা
হয় কাগজে-কলমে। এই প্রহসনের বিচারে কেবল কর্ণেল তাহের হারান নি, হারিয়ে গেছে শত শত
স্বাধীনতাকামী মানুষের স্বপ্নও। কিন্তু কর্ণেল তাহের ফাঁসির কাঠের সামনে দাড়িয়েও মাথানত
করেন নি। আবৃত্তি করে গেছেন সহকর্মী, রাজনৈতিক সহযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিনের কবিতা। ‘জন্মেছি
এ দেশটাকে কাঁপিয়ে দিতে, কাঁপিয়ে দিলাম’। তাহের আমৃত্যু সেই সাহসটা দেখিয়ে গেছেন। তিনি
বলে গেছেন,
“নিঃশঙ্ক চিত্তের জীবনে আর বড় সম্পদ নেই’
(৫)
আজকের দিনে এসে যখন আমরা কর্ণেল তাহেরের জীবন নিয়ে আলোচনা বা চর্চা
করব তখন আমাদের প্রয়োজন কর্ণেল তাহেরকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণের। আজকের বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত
তাহেরের স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে পারে নি। কর্তৃত্বহীন কোনো সমাজব্যবস্থা আমরা আজ পর্যন্ত
গড়ে তুলতে পারি নি। তাই কর্ণেল তাহেরকে কেবল বইয়ের পাতায় রেখে তাঁকে পূজা করাটা তারই
অপমান। কর্ণেল তাহেরকে যদি সঠিকভাবে ধারণ করতে হয়, অনুসরণ করতে হয় তাহলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে
নিয়ে প্রশ্ন উত্থান করতে হবে। কর্ণেল তাহেরের স্বপ্নগুলো কতটুকু পূরণ হচ্ছে সেদিকে
তাকাতে হবে। যে সময়ে গিয়ে একটা ন্যায়ভিত্তিক , আদর্শ , কর্তৃত্বহীন সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা
গড়ে ওঠবে কেবল তখন গিয়েই কর্ণেল তাহেরের বাংলাদেশ রাষ্ট্র পাওয়া সম্ভব হবে। আর কর্ণেল
তাহেরের এ স্বপ্ন সম্পূর্ণরূপে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার। সাম্য, মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন
বাংলাদেশ গড়ে ওঠলে , আজকের বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংস্কার সাধন হলে তবেই মুক্তিযুদ্ধের
অঙ্গিকার পূরণ হবে, গণমানুষের স্বপ্ন পূরণ হবে।
Comments
Post a Comment